ঢাকা, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ ভাদ্র ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফ্রিল্যান্সিং এর নামে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার



ফ্রিল্যান্সিং এর নামে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসাদুজ্জামান (ছদ্মনাম) ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় বসবাস করেন। পেশায় একজন Freelancer.

কিছুদিন আগে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে একটি বাংলাদেশী নাম্বার থেকে একজন নারী কল দিয়ে জানতে চান, তিনি অনলাইনে কাজ করতে আগ্রহী কিনা। তিনি রাজি হলে Shekh Digital Marketing থেকে রিজিয়া ফেরদৌস নামে পরিচয়দানকারী এক নারী একটি বাংলাদেশী নাম্বার থেকে তার ব্যক্তিগত  Whatsapp এ মেসেজ দিয়ে কিছু Youtube channel subscribe করতে বলে এবং telegram এ Israt Jahan নামক একজন ব্যক্তির সাথে যুক্ত হতে বলে। telegram এ Israt Jahan এর দেওয়া দুটি Youtube channel subscribe এর জন্য তাকে ২০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেয়া হয়।

পরবর্তীতে  Israt Jahan  আরেকটি telegram গ্রুপ Youtube Task Group এ যুক্ত করে দেন যেখানে ১০০ Tk/Subscription Payment করে বিকাশের মাধ্যমে। প্রতি ৫ টা Task সম্পন্ন করলে ৫০০ টাকা বিকাশ ক্যাশ ইন করে দিত। এভাবে একদিনে তাকে প্রায় ৪৫০০ টাকা ক্যাশ ইন করে দেয়। এরপর তাকে Advance Benefit Task  এর কথা বলে, যেখানে ১৬০০ টাকা ইনভেস্ট করলে ২৪০০ টাকা পাওয়া যাবে বলে জানান। তিনি রাজি হলে  Israt Jahan তাকে একজন টিউটর এর কথা বলে টেলিগ্রামে Sharmin Akter এর সাথে যুক্ত করে দেন।  Sharmin Akter তাকে একটি Crptocurrency Account এর লিংক দেন এবং সেখানে একটি একাউন্ট করতে বলেন। একাউন্ট করা হলে তারা তাকে একটি বিকাশ নম্বরে ১৬০০ টাকা ক্যাশ আউট করতে বলে। তিনি উক্ত নম্বরে ১৬০০ টাকা বিকাশ ক্যাশ আউট করলে সেই টাকা তার  Crptocurrency Account এ যোগ করে দেওয়া হয়। Crptocurrency Account এ  টাকা যোগ হওয়ার পর কিভাবে বিটকয়েন কিনতে হয় তা  Sharmin Akter মেসেজের মাধ্যমে বলে দেয়। বিটকয়েন কেনার পরপরই তার একাউন্টে ২৪০০ টাকা যোগ হয়ে গেলে উক্ত টাকা ক্যাশ ইন করে তার নাম্বারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

পুনরায় ১৬০০ টাকা ইনভেস্ট করতে চাইলে  Sharmin Akter তাকে জানায় যেহেতু তিনি প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছেন তাই ২য় ধাপ হিসেবে ৫৩২০ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। তাহলে ৬৯১৮ টাকা পাওয়া যাবে। তিনি ৫৩২০ টাকা দেয়ার পর তারা তাকে জানায় এই ধাপে ০৩ টি Benefit Task সম্পন্ন করতে হবে এবং তাকে অন্য একটি telegram গ্রুপে যুক্ত করে দেয়। এই গ্রুপে ৩ জন সদস্য পূর্বে থেকেই ছিল। গ্রুপের বাকি সদস্যরা টাকা দেওয়ার স্ক্রিনশট শেয়ার করলে তিনিও,  তে ১৪,৮০০/- টাকা পাঠান স্ক্রিনশট শেয়ার করেন । পরবর্তীতে টাকা বের করতে গেলে তাকে জানায় সে ভুল এমাউন্ট দিয়েছে তাই সিস্টেম ভেরিফাই হচ্ছে না, তার জন্যে সবার টাকাও নাকি ব্লক হয়ে গেছে এবং একই সাথে বাকি সদস্যরাও তাকে গালিগালাজ ও দোষারোপ করতে থাকে। তাকে এই সমস্যা সমাধানের জন্যে ৬১,৩০০/- টাকা ইনভেস্ট করতে বলে তাহলে সবার টাকা উঠে যাবে। তিনি  বাকিদের কথা চিন্তা করে ৬১,৩০০/- টাকা পাঠান। এরপরও বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে তার কাছ থেকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ১/২ লক্ষ টাকা করে মোট ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তিনি যে প্রতারিত হচ্ছেন তা বুঝতে পারেন ।
পরবর্তীতে তিনি খিলগাঁও থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন। বিষয়টি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শাখা ছায়া তদন্ত করে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ,পঞ্চগড় দিনাজপুর জেলা থেকে মোট ০৮ (আট) জনকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে। এভাবে এরা প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়।

তাই জনগণের প্রতি সিআইডির পরামর্শ হলোঃ-
১/ মোবাইল কল, হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম মেসেজের মাধ্যমে কেউ অনলাইনে কাজ করার কথা বললে এড়িয়ে চলুন। 
২/ অনলাইনে কাজের বিনিময়ে টাকা উপার্জন করুন কিন্তু বেশী উপার্জনের আশায় অনলাইনে টাকা ইনভেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
৩/ নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট অথবা এমএফএস একাউন্ট খুলে অন্য কাউকে দিবেন না। 
৪/ নিজে সচেতন থাকুন অন্যকে সচেতন করুন।


   আরও সংবাদ